ওসমানীনগর প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশে ফুটবলের প্রতি মানুষের ভালবাসা নিঃসন্দেহে চোখে পড়ার মতো। শহরের প্রান্ত থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠেও ফুটবল ঘিরেই গড়ে উঠছে আনন্দ বিনোদনের এক বিশাল জগৎ। এই তৃণমূল ফুটবলের অগ্রভাগে যারা নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদেরই একজন আলী আমজদ নুনু।
বুধবার, ২ জুলাই—বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিকতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) সিলেট শাখা আয়োজিত অনুষ্ঠানে তৃণমূল ফুটবলে অসামান্য অবদানের জন্য নুনু ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা আলী আমজদ নুনুকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর কদমতলার সন্তান আলী আমজদ নুনু ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি দারুণ এক ভালোবাসা নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। ময়দা মিলে চাকুরীর ফাঁকে খালি পায়ে অনুশীলন করা সেই কিশোর একদিন হয়ে ওঠেন সিলেটের তৃণমূল ফুটবলের অন্যতম প্রতিনিধি। তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারের সূচনা ১৯৯৮ সালে। ফুটবলের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা দেখে মন্নান নামের এক রাজমিস্ত্রি তাকে একজোড়া বুট উপহার দেন—যা তার যাত্রায় মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
স্মৃতি ক্লাব থেকে শুরু করে সিলেট টাউন ক্লাব, ঢাকা স্পোর্টস কোয়ালিটি, রামপুরা ক্রীড়া চক্র এবং উত্তর বারিধারার মতো ক্লাবে খেলেছেন তিনি। তৃতীয় ও প্রথম বিভাগ লিগে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা থাকলেও এক পর্যায়ে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় বাধা পড়ে তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারে। তবে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থেমে থাকেনি।
২০১২ সালে প্রয়াত ক্রীড়া সংগঠক জামাল উদ্দিনের উৎসাহে গড়ে তোলেন ‘নুনু ফুটবল একাডেমি’। আজ সেই একাডেমি শুধু ওসমানীনগরের গর্ব নয়, গোটা সিলেট তথা দেশের তৃণমূল ফুটবলের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। একাডেমিটি ২০২১ সালে বাফুফের ওয়ান স্টার এবং ২০২৫ সালে টু স্টার স্বীকৃতি লাভ করে। এখান থেকে শত শত খেলোয়াড় দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে, এমনকি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও অংশ নিয়েছেন।
ভারতের শিলচর, হাফলং, ধর্মনগর ও করিমগঞ্জের মতো স্থানে একাডেমির অংশগ্রহণ ছিলো সিলেটবাসীর জন্য বড় গর্বের বিষয়। শুধু খেলোয়াড় নয়, এখান থেকে উঠে এসেছে কোচ, রেফারি ও সংগঠকরাও।
নুনু ফুটবল একাডেমির কার্যক্রম আরও সুশৃঙ্খল করতে গঠন করা হয়েছে একটি পরিচালনা কমিটি। এতে বিভিন্ন গ্রামের প্রতিনিধি ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের স্কানথর্প ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের ডিরেক্টর ও মর্তজ গ্রুপের চেয়ারম্যান রজিউর রহমান মর্তুজা।
এ সকল কৃতিত্তে যোগ হল নতুন এক যাত্রা বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিক দিবসে তৃণমূল ফুটবলে অবদানের জন্য আলী আমজদ নুনু হয়েছে সম্মানিত।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা ই রাফিন সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা নূর হোসেন, সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির, জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি মঈন উদ্দিন এবং সিলেট আম্পায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশরাফ হোসেন আরমান প্রমুখ।
আলী আমজদ নুনু শুধুমাত্র একজন খেলোয়াড় বা সংগঠক নন, বরং তৃণমূল ফুটবলের জাগরণে এক জীবন্ত প্রতীক। তাঁর হাতে গড়ে ওঠা ‘নুনু ফুটবল একাডেমি’ এখন একটি স্বপ্নের নাম—যে স্বপ্ন বদলে দিচ্ছে অগণিত তরুণের জীবন।