ওসমানীনগর প্রতিনিধি::
তারিখটি ৫ আগস্ট হলেও, জনস্মৃতিতে এদিনটি হয়ে উঠেছে ‘৩৬ জুলাই’ — এক প্রতীক, এক সংগ্রামের নাম। ২০২৪ সালের এই দিনেই ছাত্র-জনতার দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনের অবসান ঘটে।
এই ঐতিহাসিক দিনকে স্মরণ করেই মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জুলাই যোদ্ধা সম্মেলন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ দিদারুল ইসলাম কায়েস।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিছবাহ, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আনহার আহমদ, ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোনায়েম মিয়া, সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ আয়োজনে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
৩৬ জুলাই’-এর নায়ক, সাহসী জুলাই যোদ্ধাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন সাহসিকতার প্রতীক তানভীর আহমদ, ইমরান আহমদ রুবেল, আশরাফুল ইসলাম, ইব্রাহিম আহমদসহ অনেকেই।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানানো হয় গভীর শ্রদ্ধা, আহতদের হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহার সামগ্রী। এক আবেগঘন পরিবেশে সেদিনের স্মৃতি যেন আবারও জেগে উঠেছিল উপস্থিত সকলের হৃদয়ে।
সম্মেলনের এক বিশেষ আকর্ষণ ছিল ‘জুলাই ৩৬’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এই প্রামাণ্যচিত্রে ফুটে ওঠে কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে স্বৈরশাসন, এবং সেখান থেকে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ, কৌশলী ও দুর্ধর্ষ প্রতিরোধ।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, “এই দিনটি কেবল একটি স্বৈরাচার পতনের দিন নয়, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে ছাত্র-জনতার অপরিসীম সাহসিকতা ও রণকৌশলের জ্বলন্ত দলিল।”
তারা আরও উল্লেখ করেন, কিভাবে এক সময় দেশের বিভিন্ন দপ্তর ছিল দমন-পীড়নের ঘাঁটি, আর মানুষ কথা বলত ভয়ে, ফিসফিসিয়ে। সেই প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করে — বাঙালি অন্যায় সহ্য করে না।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ওসমানীনগরের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা।
সকলের মুখে এক কথাই— “৩৬ জুলাই শুধুই অতীত নয়, এটি ভবিষ্যতের পথনির্দেশক এক ইতিহাস।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে সংগঠিত এই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মোড় ঘোরানো ঘটনা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
এই দিনটি আজ ছাত্র-জনতার ‘স্বাধীনতা দিবস’-এর মর্যাদা পেয়েছে, যা গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণে অনুপ্রেরণা জোগায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।