ওসমানীনগর প্রতিনিধিঃ
সিলেটের ওসমানীনগরের হতভাগ্য কিশোর রবিউল ইসলাম নাইম (১৪) হত্যাকাণ্ডে রেস্টুরেন্ট মালিক বুলবুল ফকিরকে প্রধান আসামি করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাতে রবিউলের শোকার্ত মা পারুল বেগম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর: ০৮)। মামলায় আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
নিহত রবিউলের পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার এলাকার গদিয়াচর গ্রামের দিনমজুর কনাই মিয়া ও পারুল বেগমের ছোট ছেলে রবিউল মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকা মাসিক বেতনে স্থানীয় ‘বগুড়া রেস্টুরেন্ট’-এ চাকরি করতো। এই রেস্টুরেন্টটির মালিক বুলবুল ফকির (পিতা: মৃত বাবুল ফকির) বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।
২৩ জুলাই, কাজ শেষে বাড়ি ফিরে আসলে রবিউলের শরীরে অস্বাভাবিক আঘাত ও কামড়ের চিহ্ন দেখে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন তার মা। ছেলের গায়ে আঁচড় ও রক্তের দাগ দেখে তাকে আর রেস্টুরেন্টে না যেতে অনুরোধ করেন তিনি। পাশাপাশি, বকেয়া বেতন ও কাপড়-চোপড় সংগ্রহে পরদিন রেস্টুরেন্টে যেতে বলেন।
রবিউল ২৪ জুলাই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ ছিল। পরিবার তার সন্ধানে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও পরিচিতজনদের নিয়ে সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু কোনো খোঁজ না পেয়ে ৩১ জুলাই ওসমানীনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং: ১৫৬৫) করেন তারা।
৩ আগস্ট এক মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী হয় পুরো এলাকা। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল রেললাইনের পাশে একটি ডোবায় অজ্ঞাতনামা কিশোরের মরদেহ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা গিয়ে নিশ্চিত হন—এটাই তাদের হারিয়ে যাওয়া রবিউল।
নিহতের মামা মো. রাহেল মিয়া বলেন, “আমার ভাগ্নে রবিউলকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার ভয়ে রেস্টুরেন্ট মালিক বুলবুল ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা গরীব মানুষ, টাকার জোর নেই। আমাদের একমাত্র ভরসা—আইন ও পুলিশ প্রশাসন। আমরা জড়িতদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি—ফাঁসির দাবি জানাই।”
লাশ উদ্ধারের দিনই অভিযুক্ত বুলবুল ফকিরকে ওসমানীনগর থানা পুলিশ আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোনায়েম মিয়া বলেন, “আমরা বুলবুলকে আটক করেছি। কুলাউড়া থানা চাইলে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।”
কুলাউড়া থানার ওসি মো. গোলাম আপসার বলেন, “বুলবুল ফকির বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। আমরা তাকে মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখাবো এবং তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
৫ আগস্ট বিকেলে রবিউলের পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামবাসীরা সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর থানার সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রিয় সন্তান হত্যার বিচার ও দোষীদের ফাঁসির দাবিতে তারা প্রায় দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।